khulna election news by Joynal



উক্ত সংবাদগুলো খুলনার দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন’ এ প্রকাশিত

খুলনার ৬টি সংসদীয় আসনের ৫টিতেই

আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা

জয়নাল ফরাজী ঃ আগামী ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র ইতোমধ্যে খুলনায় বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। এবারের নির্বাচনে খুলনার ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৫টিতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। শুধুমাত্র নগরীর প্রাণকেন্দ্র খুলনা-২ ( সোনাডাঙ্গা ও সদর ) আসন ছাড়া বাকি আসনগুলোতে আসতে পারে নতুন প্রার্থী।

খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) ঃ  আওয়ামীলীগের দূর্গখ্যাত এই আসনে এবার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের প্রার্থীর তালিকা দীর্ঘ। আসন রক্ষায় এবার প্রার্থী হতে পারেন নতুন কোন ব্যক্তি। দলের নেতাকর্মীদের সাথে মন-মালিন্যের কারনে বর্তমান সংসদ সদস্যের প্রার্থী সম্ভাবনাও কম। তাছাড়া তিনি  প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে এখনও  সিদ্ধান্ত নেননি বলে এ প্রতিবেদককে জানান।

এই আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ হারুনুর রশিদ, বর্তমান সংসদ সদস্য ননী গোপাল মন্ডল, সাবেক সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস, দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল হোসেন, চালনা পৌর মেয়র ড. অচিন্ত কুমার মন্ডল ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ সোহেল। এদের মধ্যে ৩ জন পূর্বে নির্বাচিত। মনোনয়ন পাওয়ার জন্য সকলেই চালিয়ে যাচ্ছেন তৎপরতা। তবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ সোহেল মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় এবার হিসাব নিকাশ অনেক আলাদা।

খুলনা-৩ ( খালিশপুর-দৌলতপুর ও খানজাহান আলী ) ঃ খুলনার এই গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে এখন পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল একক ভাবে ধরে রাখতে পারেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বেগম মন্নুজান সুফিয়ান দাপটের সাথে বিজয়ী হলেও সম্প্রতি কেসিসি মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী এই এলাকা থেকে তুলনামূলক কম ভোট পাওয়ায় তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে স্থানীয়রা জানান।

মহানগরীর শ্রমিক অধ্যুষিত এই আসনটিতে এবার জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগে মনোনয়ন প্রত্যাশী ৩ জন। এরা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও সরকারের শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, তরুন আওয়ামী লীগ নেতা ও কেসিসির প্যানেল মেয়র-২ মনিরুজ্জামান খান খোকন এবং মহানগর আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা শেখ সৈয়দ আলী। এরা প্রত্যেকেই মনোনয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন।

খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) ঃ  খুলনার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন মহাজোট খুলনাÑ৪ আসনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এই কারনে উক্ত আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে।  এই আসনে এবার ক্ষমতাসীনদের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৭ জন। এরা হলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক হুইপ এস,এম মোস্তফা রশিদী সুজা,  বর্তমান সংসদ সদস্য মোল্ল­া জালাল উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, জেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান জামাল,  রূপসা উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আকবার শেখ, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ এবং তেরখাদা উপজেলা চেয়ারম্যান সরফুদ্দিন বাচ্চু।

খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) ঃ আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসনে  ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা রয়েছেন মাঠে। আওয়ামীলীগ থেকে এবার এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামীলীগের ৩ প্রভাবশালী নেতা। এরা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ, অর্থনীতিবিদ ড.মাহবুব-উল-আলম ও ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হাদি।  খুলনার এই আসনটিতে বর্তমান এমপি’র সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অন্যান্য প্রার্থীরা মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন এসকল প্রার্থীরা। তাছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্য চলতি মেয়াদে কিছু তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে দৌরাত্ম্য সৃষ্টি আর প্রচার-প্রচারণায় তার অবস্থান অনেকটা আগের চেয়ে ভিন্ন।

খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) ঃ খুলনার সর্বশেষ এই আসনটি বরাবরই খুলনায় গুরুত্ব বহন করে।  ১৯৯৬ সালে  এবং গত ২০০৮’র নির্বাচনে এই আসনে শুধুমাত্র আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হন। বর্তমান সংসদ সদস্যের অবস্থান ঝুঁকিতে থাকায় এবং দলের অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারনে ক্ষমতাসীনদের এই  আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের আভাষ বেশ জোরালো ভাবেই শোনা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা প্রবীন ও নবীনদের মিলিয়ে ৪ জন। এরা হচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সোহরাব আলী সানা, প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট নুরুল হক, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পত্মী ইভা রহমান এবং জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক আকতারুজ্জামান বাবু।

এদিকে প্রার্থী পরিবর্তন নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা বলেন, খুলনার ঝুকিপূর্ণ আসন গুলো প্রধানমন্ত্রীর অনুসন্ধানী টিম চিহ্ণিত করেছেন। যোগ্যতার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন।

খুলনার ৪টি আসনে বিএনপিতে আসতে পারে নতুন প্রার্থী

জামায়াতের দুটি আসনে একাধিক প্রার্থীদের তৎপরতা

জয়নাল ফরাজী ঃ  খুলনার ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৪টিতেই বিএনপিতে আসতে পারে নতুন প্রার্থী। এগুলো হলো খুলনা-৩, ৪, ৫, এবং ৬। তবে খুলনা অন্যতম আসন ২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) এ প্রার্থী প্রার্থী প্রায় নিশ্চিত হলেও দু’গ্র“পে চলছে  গ্র“পিং ও পাল্টা-পাল্টি প্রচারণা। আর জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া আসনে নিজেরাই প্রার্থী হতে চান দলের নেতারা।

খুলনা-৩ ঃ খালিশপুর-দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানার এই আসনটিতে আগামী ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপি থেকে  মনোনয়ন প্রত্যাশী ৬ জন। এরা প্রত্যেকেই শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকদের সঙ্গে পরিচিত। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, জাফরুল্লাহ খান সাচ্চু, মহানগর বিএনপির কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠু, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা ফকরুল আলম। এরা সকলেই স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে যুক্ত।

সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, খালিশপুর-দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানার এই আসনটি এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল এককভাবে ধরে রাখতে পারেনি। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে এই আসনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আশরাফ হোসেন বিজয়ী হন। ২০০৭ সালে সংস্কারপন্থী হিসেবে দল থেকে বহিস্কার হন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগের টিকেটে বিজয়ী হন কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম। কিন্তু ২০০৮ সালে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে ১৬ হাজার ৬১০ ভোটে পরাজিত হন তিনি। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, একাধিকবার দল পরিবর্তনের কারনে গত নির্বাচনে সেকেন্দার আলী ডালিম পরাজিত হন। শিল্পাঞ্চলের এই সাবেক সংসদ সদস্য গত নির্বাচনের পর থেকে অনেকটা জনবিছিন্ন। দীর্ঘদিন ধরে তাকে নির্বাচনী মাঠে দেখা যাচ্ছে না। সেই আলোকে বিএনপির এই আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে।

খুলনা-৪ ঃ  এ আসনটি  ঝুঁকিপূর্ণ আসন হিসেবে বিবেচনা করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল (বিএনপি) এর নেতৃবৃন্দ। গত ৪ টি সংসদ নির্বাচনে মাত্র একবার বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। রূপসা-তেরখাদা ও দিঘলিয়ার এ আসনে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ও তৎকালীন মহানগর বিএনপির সভাপতি এম.নুরুল ইসলাম দাদু ভাই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নতুন প্রার্থী ও জেলা সহ-সভাপতি মোল্লা জালাল উদ্দিনের কাছে পরাজিত হন বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তরুন শিল্পপতি শরীফ শাহ কামাল তাজ। তিনি ১১ হাজার ৬৬৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি থেকে এবার মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক শফিকুল আলম মনা, তরুন শিল্পপতি শরীফ শাহকামাল তাজ ও আজিজুল বারী হেলাল। বিএনপি জোটের জরিপে এই আসনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়েছে। তাই এ আসনেও আসতে পারে নতুন মুখ।

খুলনা-৫ ঃ   বিএনপি থেকে এবার ডুমুরিয়া-ফুলতলার এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ২ জন। এরা হলেন ডাঃ গাজী আবদুল হক ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোল্লা আবুল কাশেম। সূত্র জানায়, গত ২ বার জাতীয় নির্বাচনে  জোটের শরিকদল জামায়াতকে ছাড় দিয়ে আসছে বিএনপি। কিন্তু এই আসনে আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে ছাড় দিতে রাজী নয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। ২০০১ সালের নির্বাচনে চার দলীয় জোটের শরিকদল জামায়াতের মহানগর শাখার সাবেক আমির অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের নারায়ন চন্দ্রকে পরাজিত করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে একই প্রার্থীর কাছে ২৯ হাজার ভোটে পরাজিত হন তিনি। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির দুই নেতা। তারা জামায়াতকে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে রাজী নয় বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছে।

খুলনা-৬ ঃ খুলনার এই আসনেও (পাইকগাছা ও কয়রা) বরাবরই জোটগত ভাবে জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন দিয়ে আসছে বিএনপি। খুলনার এই আসনটি খুলনাবাসীর জামায়াতের ঘাঁটি বলে পরিচিত।  জোটগত ভাবে ছাড় না দিয়ে এই আসনে আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান বিএনপির ৫ হেভিয়েট প্রার্থী। এরা হলেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য স.ম বাবর আলী, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মন্টু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক ও এ্যাব-খুলনার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এম.এম আব্দুল গোফরান, কয়রা উপজেলার একমাত্র প্রার্থী এ্যাড. মোমরেজুল ইসলাম। এছাড়া এই আসনে জামায়াত মহানগর সভাপতি আবুল কালাম আজাদকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করেছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া । যোগ্যতার ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে। দল চাইলে ছাড় দেওয়া হবে জামায়াতকে। তবে নির্বচিনের জন্য এখনও আমরা প্রস্তুত নই।

Comments