খুলনা টেক্সটাইল মিল্স-জয়নাল ফরাজী

বন্ধের ২০ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি খুলনা টেক্সটাইল মিল্স
জয়নাল ফরাজী
বন্ধ হওয়ার ২০ বছর অতিবাহিত হলেও একের পর এক বাধা বিপত্তির কারণে এখনো আলোর মুখ দেখেনি শিল্পনগরী খুলনার ১২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান খুলনা টেক্সটাইল মিল্স। সরকারের যথেষ্ট আন্তরিকতা সত্ত্বেও একের পর এক নয়া অজুহাতে পিছিয়ে যাচ্ছে প্রকল্পটি। দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও নতুন কোন অগ্রগতি না হওয়ায় বর্তমান সরকারের আমলে খুলনা টেক্সটাইল মিলের ভাগ্য নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এদিকে নতুন ইস্যু হিসেবে দেখা দিয়েছে হাইটেক পার্ক নির্মাণের বিষয়টি।
সূত্র জানায়, উনিশ শতাব্দীর প্রারম্ভে  খুলনা শহরের নিউ মার্কেটে আচার্য্য প্রফুল¬ চন্দ্র রায় নির্মিত এপিসি কটন মিল যা পরবর্তীতে খুলনা টেক্সটাইল মিল নামে পরিচিত। ১৯৯৩ সালে চারদলীয় জোট সরকার কর্র্তৃক মিলটির পুরাতন যন্ত্রাংশ, দুর্বল অবকাঠামো ইত্যাদি নানা সমস্যার কারণ দেখিয়ে কয়েক হাজার লোককে বেকার বানিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রায় বছর পর মিলের জমির সর্বোত্তম ব্যবহার, শিল্পায়ন ১২ হাজার বেকার শ্রমিকের কথা মাথায় রেখে ১৯৯৯ সালে কালীন আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিলের জমির উপরখুলনা টেক্সটাইল পল্লীপ্রকল্প অনুমোদন করেন।
সরকার পরিবর্তনের কারনে প্রায় বছর প্রকল্পের কাজ থমকে ছিল। গত ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মহাজোট সরকারের আন্তরিকতায় প্রকল্পের কাজ শুরু হলে স্বাধীনতা পূর্ব ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা দায়ের করে। তাদের সাথে মামলা নিষ্পত্তির পর পুনরায় কাজ শুরু হলে ২০১০ সালে জনৈক মাহমুদ আলী মৃধা মালিকানা দাবিতে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৯৮৮০/২০১০। আদালত ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারী মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকারকে মিলের সম্পত্তি হস্তান্তর থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন। যে কারণে প্রকল্পের কাজ বন্ধ বা স্থগিত রাখা হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৮ মে রীটের শুনানী না হওয়ায় সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এদিকে প্রকল্পের অনিশ্চয়তার মধ্যেও গত ১৪ সেপ্টেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় আইসিটি সেমিনারে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, খুলনা টেক্সটাইল মিলের জমিতে হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হবে। জমি হস্তান্তর হলেই এর কাজ শুরু হবে। কিন্তু গত ১মাসে এর অগ্রগতি চোখে পড়ছে না।
এর ফলে নতুন করে দেখা দিয়েছে জটিলতা। আর খুলনাবাসীকে করেছে হতাশাগ্রস্থ। দীর্ঘ ২০ বছর অতিবাহিত হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, মামলা, নয়া প্রকল্প ইত্যাদি অজুহাতে আজও অন্ধকারে নিমজ্জিত খুলনা টেক্সটাইল মিলের ভাগ্য।
স্থানীয়রা জানান, খুলনা টেক্সটাইল মিলের সীমানা প্রাচীরের নির্মাণ আংশিক সম্পন্ন হলেও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এর ফলে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা। সন্ধ্যার পর থেকে সেখানে বসে মদ, গাজা, জুয়ার আসর। মাদক সেবনকে কেন্দ্র করেই গত বছর প্রাণ হারান সোহেল রানা নামের এক তরুণ যুবক। আর চলতি বছর সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন বিএনপি এক কর্মী।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ মোশাররফ হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, ২০ বছর অতিবাহিত হলেও অবহেলিত খুলনাঞ্চলের লাভজনক প্রতিষ্ঠান টেক্সটাইল মিলের ভাগ্য এখনো অনিশ্চয়তায়। একের পর এক খোঁড়া অজুহাতে মিলটির ভাগ্য ঝুলে আছে। খুলনাবাসীর প্রত্যাশা যাই হোক না কেন দ্রুতগতির সাথে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার করা উচিত।

Comments