দেড় মাস ধরে নগরীতে পানি সংকট/জয়নাল ফরাজী

দেড় মাস ধরে নগরীতে পানি সংকট চরমে
জয়নাল ফরাজী ঃ
সুপেয় পানির জন্য হাহাকার চলছে খুলনা মহানগরীজুড়ে। প্রায় দেড়মাস ধরে নগরীর বেশিরভাগ এলাকার নলকূপে ঠিকমতো পানি উঠছে না। ওয়াসার পাইপলাইনেও পানি নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের পানি নিয়ে চরম সংকট পোহাচ্ছেন মহানগরীর ১৬ লাখ মানুষ। অন্যান্য বছর গরমের শুরুতে পানি সরবরাহ কিছুটা কমে যায়। কিন্তু এবার পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার পথে। এমন ভয়াবহ অবস্থা আগে কখনও দেখেনি খুলনার মানুষ। খাবার পানির পাশাপাশি গৃহস্থলী কাজে ব্যবহার করার পানিরও তীব্র সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
খুলনা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ১৬ লাখ মানুষের প্রতিদিনের পানির চাহিদা ২৪ কোটি লিটার। চাহিদার সম্পূর্ণ পানিই ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয়। ওয়াসা ৭৭টি পাম্প থেকে এবং নগরবাসী প্রায় ১০ হাজার নলকূপে প্রতিদিন পানি তুলছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর নিচে নেমে যাচ্ছিল। কিন্তু এ বছর অবস্থা অতীতের সব দুর্ভোগকে ছাড়িয়ে গেছে।
গত কয়েকদিন নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পানির জন্য মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের নানা চিত্র দেখা গেছে। নগরীর বয়রা এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক জানান, দুই বার মোটর পরিবর্তন করার পরও পানি উঠছে না তার নলকূপে।
নগরীর শেখপাড়া এলাকার বাসিন্দা দাউদ খানের বাড়িতে চার তলা ভবন ও টিনশেডে ১২টি পরিবারের বাস। গভীর নলকূপ থেকে মোটরের সাহায্যে পানি তুলে ব্যবহার করতেন তারা। মধ্য মার্চের পরই মোটরে পানি ওঠা কমে যায়। আর এপ্রিলের শুরুতে পানি ওঠা পুরোপুরি বন্ধ। প্রতিবেশী ফরিদ দেওয়ানের বাড়িতে ওয়াসার সংযোগ। গত ১৫-২০ দিন ধরে পানি পাচ্ছে না তারা। পানির অভাবে তাদের ভাড়াটিয়ারা চলে গেছে।
পানির জন্য মানুষের কষ্ট চোখে পড়ে রাত কিছুটা বাড়লে। রাত ১০টার পর থেকেই নগরীর বিভিন্ন সড়কের নলকূপে ভিড় জমান মধ্যবিত্ত পরিবারের নারী-পুরুষ। গভীর রাত পর্যন্ত পানি নেওয়ার দৃশ্য দেখা যায় অধিকাংশ এলাকায়। তবে ৫/৭শ' টাকার বিনিময়ে প্রতিদিন পানির ব্যবস্থা করেছে ওয়াসা। নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে নিজস্ব ট্যাঙ্কে করে ৩ হাজার লিটার পানি পৌঁছে দেয় ওয়াসা। প্রতিদিন ৫০০ টাকা দিয়ে পানি কিনে ব্যবহারের সামর্থ্য নগরীর অধিকাংশ মানুষেরই নেই। ওয়াসার এই উদ্যোগ ধনীদের মুক্তি দিয়েছে পানির কষ্ট থেকে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, পানির স্তর প্রতিবছরই নিচের দিকে নামছে। সব থেকে বড় বিষয় ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলনের পর সেই পানি রিচার্জের কোনো ব্যবস্থা থাকছে না। পুকুর-ডোবা, খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভূগর্ভে পানি প্রবেশ করতে পারছে না। এ জন্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনি এ সংকটকে উল্লেখ করেছেন দুর্যোগ হিসেবে। তিনি বলেন, হঠাৎ করে নগরজুড়ে পানিশূন্যতা নগরবাসীকে নতুন এক দুর্যোগের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এই দুর্যোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে জলাধার সংরণের উদ্যোগ নিয়েছে কেসিসি।
খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ, পিইঞ্জ বলেন, তারা আগের তুলনায় বেশি সময় পাম্প চালিয়ে সংকট কমানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, মধুমতি নদীর পানি এনে পরিশোধন করে সরবরাহ না করা পর্যন্ত এই সংকট মিটবে না।

Comments