দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন ও আমার সাংবাদিকতা
- জয়নাল ফরাজী

২০১০ সালের ১৬ই অক্টোবর সোনাডাঙ্গা ময়লাপোতা মোড়ে খুন হন আমার নানা মনা মুন্সি মৃধা। তার মৃত্যুর পর যখন আমরা শোকে বিহ্বল ঠিক তখনই পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জন্য পরিচয় হয় সমকালের ব্যুরো প্রধান মামুন রেজা ও স্টাফ রিপোর্টার কনক রহমানের সাথে। তখন তারা বিভিন্ন সময় আমার নানা’র মৃত্যুর ফলোআপ সংবাদ তৈরি করে প্রকাশ করেছেন। তখন তাদের মধ্যে যে সাংবাদিকার কর্মস্পৃহা ও চাঞ্চল্য দেখলাম তাতে আমার মনে সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছা আরও বেড়ে গেলো। 
মুলত ছোটবেলা থেকেই সংবাদপত্র পড়ার প্রতি আমার ঝোঁক ছিল। যখন ক্লাস থ্রি তে পড়ি তখন থেকেই সংবাদপত্র পড়ি। এরপর যখন সংবাদ সম্পর্কে একটু বুঝতে শিখলাম তখন থেকে সাংবাদিক হওয়ার শখ ছিল। সমাজের অন্যায়-অবিচার পত্রিকায় তুলে ধরতে ইচ্ছা করতো। স্বপ্ন দেখতাম সাংবাদিক হওয়ার জন্য। হঠাৎ এরকম একটি সুযোগ পেয়ে গেলাম।
২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখলাম খুলনায় ‘দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন’ নামে একটি পত্রিকার আত্মপ্রকাশ হচ্ছে। তখন আমি সবেমাত্র এসএসসি পাশ করেছি, ভাবলাম এতো অল্প বয়সে হয়ত আমাকে তারা (পত্রিকা কর্তৃপক্ষ) কাজ করতে নিবে কি না। তবুও আমি আবেদন পত্র পাঠালাম সোনাডাঙ্গা থানা প্রতিনিধি হওয়ার জন্য। সাথে পাঠালাম একটি নমুনা সংবাদ। সংবাদ বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ আমাকে সুযোগ দিলো পত্রিকায় কাজ করার জন্য। 
সোনাডাঙ্গা থানা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করলাম। অনেক অনুসন্ধানী সংবাদ করে নিজেকে ভাল সাংবাদিক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে থাকি। সাংবাদিক মহলে অনেকে উপহাস করতো এতো ছোট ছেলে সাংবাদিক হয় কি করে। সেদিকে খেয়াল না করে নিয়মিত কাজ করতে থাকি। 
এরপর এই পত্রিকার সম্পাদক এস.এম সাহিদ হোসেন ও তৎকালীন বার্তা সম্পাদক দেবনাথ রণজিৎ কুমার রনো’র অনুপ্রেরণায় কাজ করতে থাকি। ২০১২ সালের প্রথম দিকে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে আমাকে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়। তখনও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা শিখিনি। আস্তে আস্তে অনেক সংবাদ করলাম। যার ফলে অনেকের কাছে একজন সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকি।
এরপর থেকে সম্পাদক স্যার (এস.এম সাহিদ হোসেন) আমাকে বলে দিলেন, আমি চাই তুমি ভাল ভাল নিউজ করে একজন প্রথম শ্রেণীর সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা কর। সেই থেকে আগ্রহটা আরও বেড়ে গেলো। বিভিন্ন  রাজনৈতিক নিউজ, অনুসন্ধানী নিউজ ও উন্নয়নমূলক নিউজ করে তার সুনজরে আসি। 
এর মধ্যে ২০১৩ সালে এইচ.এস.সি পাশ করে বেশি করে ডেস্ক-এ বসে কাজ করি। ডেস্কে বসে কাজ করাকালীন এখনো আমাকে সাহায্য করেন মিলন হোসেন ভাই (বর্তমান ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক), আব্দুল মালেক কাকা (চীফ ফটোসাংবাদিক), আনওয়ার আহমেদ মুন ভাই (ক্রীড়া সাংবাদিক), চায়না দিদি (স্টাফ রিপোর্টার), বাহাউদ্দিন বাহার ভাই (ফটোসাংবাদিক), খাদিজা আপা (রিপোর্টার)। তাদের অনুপ্রেরণা, নতুন নতুন আইটেম নিউজ, তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সাংবাদিক হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করতে থাকি। ২০১৩ সালের শেষ দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের ইউজার সদস্য পদ লাভ করি। আশাকরি খুব শীঘ্রই খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নেরও সদস্য পদ পাবো। 
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন এর কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে এর নাম চয়ন। কারণ বৃহত্তর দক্ষিণাঞ্চলের সাথে মিল রেখে ‘দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন’ রাখা হয়েছে। যে পত্রিকার মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যায়, অবিচার, উন্নয়ন-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হবে। তাছাড়া এর শ্লোগান ‘সময়ের সাথে সত্যের পথে’ কে সামনে রেখে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশে আমরা দুরন্ত। চার বছরে পত্রিকাটি পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সামাজিত যোগাযোগের মাধ্যমে (ফেসবুক) পেয়েছে জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনের ফেসবুক আউডি ও পেজ আজ খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে বেশ প্রিয়। 
২০১৪ সালের শুরু থেকে দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কাজ করতে থাকি। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন হাঁটি হাঁটি পা পা করে চারটি বছর অতিক্রম করছে বুঝতে পারিনি। আজ ২০১৫ সালের ১০জুলাই দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনের চতুর্থ বর্ষ পূর্তি। এর সাথে আমারও সাংবাদিকতার চার বছর পূর্তি হচ্ছে। চার বছরেও নিজেকে একজন ভাল সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি কিনা সে বিষয়ে এখনো সন্দেহ আছে। যাই হোক আজ দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনের ৫ম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
লেখক: স্টাফ রিপোর্টার, দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন, খুলনা। 

Comments