শূন্য থেকে কোটিপতি মদের কারবারি শাহজাহান
জয়নাল ফরাজী:

খুলনার মাদক সম্রাট শাহজাহানকে ঘিরে রীতিমতো তৈরি হয়েছে রহস্য। একের পর এক বিদেশী মদের চালান ধরা পড়লেও খোঁজ মিলছে না তার। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তার টিকিটিও ছুঁতে পারে না। ফলে তাকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়া এ মাদক সম্রাটকে নিয়ে চালানো অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য।
জানা গেছে, শুধু মাদক ব্যবসা করে শাহজাহান নগরীতে একাধিক মার্কেট গড়ে তুলেছেন। তাছাড়া বাগানবাড়িসহ রয়েছে তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এছাড়া তিনি সর্বাধুনিক মডেলের দামি গাড়িতে চলাফেরা করে থাকেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শাহজাহান কৌশলে খুলনা এবং এর আশপাশের কয়েকটি জেলায় দেশী -বিদেশী মদ এবং বিয়ারের ব্যবসা করে থাকেন। মাদক ব্যবসা পরিচালনার জন্য তার ৩০জন বেতনভুক্ত লাইনম্যান রয়েছে। শুধুমাত্র মোবাইলে ফোন করলেই লাইনম্যানরা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয় মদ, আর বুঝে নেয় টাকা। সম্প্রতি সে তার ব্যবসাকে আরও ডিজিটালাইজড করেছে। এক্ষেত্রে বিকাশের মাধ্যমে আগে টাকা পাঠালে দ্রুত মদ পৌঁছে যায়।
সূত্র জানায়, তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগী মনোয়ার ওরফে মনো এবং শানু। এছাড়াও তার রয়েছে প্রায় এক ডজন রক্ষিতা। এসব রক্ষিতাদের স্ত্রী সাজিয়ে নগরীর অভিজাত এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে শাহজাহান গড়ে তুলেছেন মাদকের আড়ত। এ গোপন আড়ত থেকে সে মদ সরবরাহ করে শহরজুড়ে। এ পর্যন্ত তার কয়েক স্ত্রীর সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। যার মধ্যে মুন্নী আক্তার, পারুল ও ফরিদা পারভীন উল্লেখযোগ্য। কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের কর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় দীর্ঘ এক যুগ তার ব্যবসা চালাতে কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে কয়েকবার তার মাদকের ডেরায় অভিযান চালায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর সে কৌশল পরিবর্তন করে ব্যবসাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে পুনরায় বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিরোজপুরের আব্দুল মজিদ হাওলাদারের ছেলে শাহজাহান হাওলাদার। কোটিপতি এ মাদক সম্রাট এক যুগেরও বেশি সময় পদ্মার এপারের অধিকাংশ জেলায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশী মদ ও বিয়ার সরবরাহ করে আসছে। নগরীর অভিজাত সব আবাসিক হোটেল এবং বিভিন্ন  ভিআইপি ক্লাবে তার লাইনম্যান মদ ও বিয়ার সরবরাহ করে থাকে। শাহজাহান চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর এবং ঢাকা থেকে এসব মাদকদ্রব্য খুলনায় নিয়ে আসে। এগুলো বিকিকিনির কাজে রয়েছে তার বিশ্বস্ত অর্ধশতাধিক কর্মী। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার এক ব্যবসায়ী শাহজাহানকে মদ সরবরাহ করে থাকে। সে খুলনার আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণীর অসাধু সদস্য এবং কতিপয় অসৎ রাজনীতিককে অর্থ এবং ফ্রি মাদক সরবরাহের বিনিময়ে ম্যানেজ করে এ ব্যবসা করার সুযোগ পায় বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে হিসাবের তারতম্য হলেই কেবল তার ডেরায় পুলিশের হাত পড়ে বলে নগরীতে ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, খুলনার উপ-পরিচালক পারভীন আক্তার বলেন, শাহজাহানের নেটওয়ার্ক অনেক বড় বলে তিনি শুনেছেন। সে অধিকাংশ সময় ঢাকাতে থাকে। মাদকদ্রব্যের যশোর অফিস কয়েকবারই তার মাদকের চালান আটক করেছে। তার ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সতর্ক রয়েছে বলেও জানান তিনি।


Comments