অজ্ঞাত কারনে ধরাছোঁয়ার বাইরে মাদক সম্রাট শাহজাহান
জয়নাল ফরাজী:

একের পর এক মাদকের বড় চোরাচালান ধরা পড়লেও আটক হচ্ছে না খুলনার চিহ্নিত মাদক সম্রাট শাহজাহান। খুলনার শহরে তিনি শূন্য থেকে কোটিপতি বনে গেছেন। তার রয়েছে মাদকের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। পুলিশ তাকে আটকের বিষয়ে কোন সাফল্য পাচ্ছে না অজ্ঞাত কারনেই। 
জানা গেছে,  ২০১১ সালের ২৭ মার্চ রাত ১২টার দিকে পুলিশ নগরীর ইউসুফ রো রোডের ৩ নম্বর মির্জাপুরে শাহজাহানের ভাড়া বাড়িতে অভিযান চালায়। ওই সময় বাড়ির সিঁড়ির নিচের দুটি গোডাউন ও দোতলার বিভিন্ন কক্ষ থেকে ৬৪০ বোতল দেশী-বিদেশী মদ, এক হাজার ৬০৮ ক্যান বিয়ারসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় তালাবদ্ধ ঘরের কক্ষ থেকে একটি একনলা বন্দুক ও ৮ রাউন্ড বন্দুকের কার্তুজ ও নগদ ৯০ হাজার ৭৫০ টাকা, একটি বৌদ্ধমূর্তি, একটি স্বর্ণের সাদা পাথর সংবলিত আংটি, বিভিন্ন মডেলের ৯টি মোবাইল সেট, এক গুচ্ছ চাবি ও ৮টি ৫শ’ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শাহজাহানের স্ত্রী ফরিদা পারভীন, তার ছেলে জুলফিকার আলী খান ওরফে শুভ, মেয়ে ফাতেমাতুজ জোহরা মহুয়া, বাড়ির ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ ও কাজের মেয়ে রেশমা আক্তারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু তখন শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। এ মামলায় শাহজাহান ও তার পরিবারের সদস্যসহ সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তবে আসামীরা সকলেই আদালত থেকে জামিন নিয়েছে।
একইভাবে ২০১১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকা থেকে ১৪৫ বোতল বিদেশী মদ ও ৭২ ক্যান বিয়ার নিয়ে খুলনায় আসার পথে খানজাহান আলী (র.) সেতু এলাকা থেকে পুলিশ সিলভার কালারের একটি প্রাইভেটকার আটক করে। প্রাইভেটকারটি আটকের সময় কামাল জমাদ্দার ও শাহজাহান নামে দু’ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা ওই মাদক খুলনার মাদক সম্রাট শাহজাহানের বলে স্বীকার করে। এরপর ২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল  পুলিশ নগরীর সিমেট্রি রোডের একটি আবাসিক ভবনে অভিযান চালিয়ে শাহজাহানের ২২ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের প্রায় ৫শ’ বোতল দেশী-বিদেশী মদ ও বিয়ার উদ্ধার করে। নগরীর সিমেট্রি রোডে একটি বাসার দ্বিতীয় তলা ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ মাদকদ্রব্যের আড়ত গড়ে তুলেছিল শাহজাহান। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ জিয়াউদ্দীনের নেতৃত্বে ওই গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ২৬৬ ক্যান বিয়ার, ২২১ বোতল দেশী-বিদেশী মদ এবং মদ বিক্রির ১২ হাজার ৮শ’ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে কেরু অ্যান্ড কোং, ভোদকা, হুইস্কি, ভ্যাট ৬৯, স্পিকার লাইনসহ ২৫ প্রকারের দেশী-বিদেশী মদ ছিল। তবে পুলিশ সেবারও শাহজাহানকে ধরতে পারেনি। এমনকি এ মামলায় শাহজাহানকে আসামী পর্যন্ত করা হয়নি।
সর্বশেষ গত ১৮ আগস্ট নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানকালে ওই বাড়ি থেকে বিভিন্ন ব্রান্ডের ৪৫৫ বোতল বিদেশী মদ ও ৭৩৬ ক্যান বিদেশী বিয়ার এবং দু’টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যের মূল্য ৩৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ঘটনাস্থল থেকে শাহজাহানের স্ত্রী মুন্নী আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। তবে শাহজাহান বরাবরের মতো এবারও থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। গ্রেফতারকৃত মুন্নী আক্তার নগরীর লবণচরা থানার সাচিবুনিয়া বাজার এলাকার ‘সোনালী কটেজ’ নামে অন্য বাড়িতে বসবাস করে মাদক ব্যবসায় তাকে সহযোগিতা করতো বলে র‌্যাব জানিয়েছে। সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার সৈয়দ মো. শহিদুল্লাহর ওই বাড়ির নীচতলা ভাড়া নিয়ে শাহজাহান এবং তার স্ত্রী মুন্নী আক্তার দীর্ঘদিন যাবত গোপনে মাদক ব্যবসা চালাচ্ছিল। শাহজাহানের অপর এক স্ত্রীও সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার অন্য একটি ভাড়া বাড়িতে থাকে বলে জানা গেছে। সেখানেও রয়েছে তার অবৈধ মদের মজুদ।
সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের ৩ আগস্ট নগরীর রয়্যাল হোটেলে সোনাডাঙ্গা থানার ৫ পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করার সময় নগর গোয়েন্দা পুলিশ শাহজাহান হাওলাদারকে গ্রেফতার করে। ওই সময় তার সঙ্গে সখ্যতা এবং বৈঠক করার অভিযোগে সোনাডাঙ্গা থানার এক এসআই ও ৪ কনস্টেবলকে পরদিন সাসপেন্ড করা হয়। তবে গ্রেফতারের কিছু দিনের মধ্যেই শাহজাহান জামিনে বেরিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র এডিসি মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, শাহজাহান নানা কৌশল অবলম্বন করে মাদক ব্যবসা করছিল। পুলিশ তার ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Comments