খুলনায় মাদকের শীর্ষে সর্বনাশা ইয়াবা
জয়নাল ফরাজী:
সহজ বহনযোগ্যতা, অল্পতে অধিক কার্যকারিতা গন্ধ ও ঘ্রাণবিহীন হওয়ায় খুলনায় মাদকের বাজারে দিন দিন আধিপত্য বাড়ছে মরণঘাতি ট্যাবলেট ‘ইয়াবা’র। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে প্রায় সব শ্রেণী- পেশার মানুষ এই নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ জেনে, আবার কেউ না জেনেই বিপন্ন করছেন নিজের জীবন। এমন কোনো পেশা নেই যেখানে মরণ নেশার আধিপত্য নেই। খোদ পুলিশ থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিকরা পর্যন্ত জড়িয়ে পড়েছেন এই মরণনেশার বাণিজ্যে। শহর থেকে এ নেশা ছড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জেও। ফলে গাঁজা, হেরোইন, ফেন্সিডিলসহ অন্যান্য মাদকের ব্যবহার কমে গেলেও দিন দিন বাড়ছে ইয়াবাসেবীর সংখ্যা। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও নগরীর একাধিক মাদক কেন্দ্র ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
নগরীর একাধিক মাদক নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসকরা জানান, ইয়াবা ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে চলেছে। আর এ কারণে সমাজে নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা ও হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধ বাড়ছে। ইয়াবা আসক্তরা জন্মদাতা বাবা-মাকে খুন করতেও দ্বিধা করে না। ইয়াবা খেতে খেতে তারা একেকজন ‘মানববোমা’য় পরিণত হয়। যার বিস্ফোরণে সমাজ কলুষিত হচ্ছে। রাজধানীর চামেলীবাগে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী ইয়াবা আসক্ত ঐশীর মতোই পুলিশ ইন্সপেক্টর পিতা ও মাকে খুনের পর খুন কিংবা অপরাধ করলেও এ নিয়ে তাদের ভিতরে কোনো অনুশোচনা হয় না। কারণ ইয়াবা সেবনকারীর পুরো মানসিক পরিবর্তন ঘটে যায়। বিষন্নতা চরম আকার ধারণ করে। ভিতর ভিতর চরম নিষ্ঠুরতার সৃষ্টি হয়। কোমলমতি মেধাবী ছাত্রী ঐশীর সেই পরিবর্তন ঘটায় সে তার পিতা-মাতাকে হত্যা করে।
চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সেখ আকতার উজ জামান দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে বলেন, ইয়াবা আসক্তদের ‘নার্ভ সিস্টেম’ পুরোটাই ‘ড্যামেজ’ করে ফেলে। তারা মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে থাকে। নিজেরা আত্মহত্যা করে এবং অন্যদের খুন করতে পারে। এটি সেবনে উচ্চরক্ত চাপ ও হৃদরোগ বৃদ্ধি, হজমশক্তি নষ্ট হওয়া ও শরীর দুর্বল হয়ে পড়া, পিঠে ব্যাথা, ফুসফুস ও কিডনি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ইয়াবা আসক্তদের অনেকেই স্থায়ীভাবে যৌন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। তাদের চিকিৎসা দিয়ে তেমন কোনো লাভ হবে না। তাদের মধ্যে নানা মানসিক পরিবর্তন ঘটে, ফলে তারা নিষ্ঠুর আচরণ করে বলে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান।
Comments
Post a Comment