খুলনায় ১০২ জন মাদক সম্রাট ইয়াবা বিক্রির সাথে জড়িত
জয়নাল ফরাজী:

ইয়াবা নেই খুলনাতে এমন কোনো এলাকা নেই। শহরের বাইরে উপজেলা সদর ছাড়াও গ্রাম-গঞ্জে চলতে এ মরণঘাতি ওষুধের জমজমাট বাণিজ্য। এটি ‘বাবা’ হিসাবে খ্যাত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, ইয়াবার ব্যবহার সমাজে এমন পর্যায়ে চলে গেছে যা অধিদফতরের একার পক্ষে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। যেখানে অধিদফতরের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা, পুলিশসহ নিয়ন্ত্রণকারী প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাদক ব্যবসায় জড়িত এবং নিয়মিত ব্যবহারকারী, সেখানে ইয়াবা প্রতিরোধে ফলাফল শূন্যই হচ্ছে। এ কর্মকর্তারা ইয়াবা প্রতিরোধে সকল পেশার লোকজনকে এগিয়ে আসার এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর উপ-আঞ্চলিক কার্যালয়ের সূত্র জানা গেছে, নগরীর টুটপাড়া, বানিয়াখামার, নিরালা, গল্লামারী, নতুনবাজার, লবণচরা, খালিশপুর, দৌলতপুর ও ফুলবাড়িগেট এলাকাসহ নগরীর অধিকাংশ আবাসিক হোটেলে ১০ থেকে ১২ জন পাইকারী বিক্রেতা নিয়মিত ইয়াবা বিক্রি করছে। একই সাথে প্রায় ২৫/৩০ জন খুচরা বিক্রেতা সরাসরি সেবীদের কাছে সরবরাহ করছে। এতে ১০২ জন মাদক সম্রাট জড়িত রয়েছেন বলে জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। যার অধিকাংশই নারী ও তরুণী। 
তাছাড়া খুলনার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ইয়াবা’র বেচাকেনা চলছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। তুলনামূলকভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ইয়াবার চাহিদা বেশি। 
খুলনায় সাধারণত তিন ধরনের ইয়াবার খোঁজ পাওয়া যায়। গায়ে ‘ওয়াই’ লেখা ইয়াবা খুচরা বাজারে প্রতি পিস ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। ‘আর-সেভেন’ লেখা ভালোমানের ইয়াবা প্রতি পিস ৫শ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা। এছাড়া চম্পা সুপার নামের ইয়াবা বাজারে নতুন এসেছে। দেশীয় এ ইয়াবার দামও কম।
বিজিবি, পুলিশ, কোস্টগার্ড, গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সকল আইন প্রযোগকারী সংস্থা ইয়াবা উদ্ধারে তৎপর থাকলেও এখনও অধরাই রয়ে গেছে শীর্ষ ইয়াবা গডফাদাররা। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী ইয়াবার পাইকারী বিক্রেতাদের নাম-পরিচয় জানার পরও তাদের গ্রেফতার করতে পারে না প্রশাসন। আবার সাংবাদিকদের কাছে তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না; পরবর্তীতে অভিযান চালানো হবে এমন প্রত্যাশায়। খুচরা বিক্রেতাদের মাঝে-মধ্যে হাতে-নাতে গ্রেফতার করলেও আইনের ফাঁক-ফোকড় দিয়ে বেরিয়ে আসছে তারাও।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক পারভীন আক্তার দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে বলেন, প্রতিমাসে খুলনায় প্রায় শ’খানেক মামলা হচ্ছে। মোবাইল কোর্টে সাজা না দিয়ে মামলা দায়ের হলে ৫/৬ বছর লেগে যায় নিষ্পত্তিতে। তখন অনেক অপরাধী প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যেতে পারে। ফলে সমাজকে জীবন বিধ্বংসী ইয়াবা’র ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ধর্মীয়, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রচার-প্রচারণা এবং পারিবারিক অনুশাসনই ইয়াবা প্রতিরোধ করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Comments