খুলনায় মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে ৩৭ শতাংশ নারী
জয়নাল ফরাজী:
খুলনা মহানগরীতে আবারো আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে মাদক বাণিজ্য। আর এসব মাদকের প্রধান ব্যবসায়ীর বেশিরভাগই নারী ও তরুণী। গাঁজা, ফেনসিডিল ও হেরোইনের পর মাদকসেবিদের নেশার তালিকায় ক্রমশ চাহিদা বাড়ছে ইয়াবা নামক উত্তেজক ট্যাবলেটের। আর ওই নেশার প্রথম শিকার হচ্ছেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও উঠতি বয়সি যুবকরা। প্রতিমাসে গড়ে কয়েক লাখেরও বেশি পিস ইয়াবা বিকিকিনি হচ্ছে খুলনায়। উৎসব উপলক্ষে এসব বিকিকিনি বেড়ে যায় বহুগুণে। গ্রামাঞ্চলে গাঁজা ও ফেনসিডিলের চাহিদা বেশি। ইয়াবার চাহিদা মহানগরীর তরুণদের মধ্যে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীসহ উপজেলা পর্যায়ে মাদক সম্রাটদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ নারী। এ নারী মাদক ব্যবসায়ীরা মোটা অঙ্কের টাকার মালিক হয়েছেন মাদক ব্যবসা করে। বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে তারা মাদক বিক্রি করে থাকেন। বিশেষ করে নিজেদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে তারা ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা ও হেরোইন সরবরাহ করেন। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃত নারী মাদক ব্যবসায়ীদের এরকম দৃশ্য নতুন নয়। আর এই নারী মাদক ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই বসবাস করে নগরীর বস্তি এলাকায়।
গ্রেফতার এড়াতে তারা প্রশাসনের অনেকের সঙ্গে সখ্যতা রক্ষা করে চলেন। প্রতিদিনই দু’একজন নারী ও তরুনী মাদক বিক্রেতা গ্রেফতার হলেও মাদকের সিন্ডিকেট উৎপাটন করতে পারছে না পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
সর্বশেষ, গত বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৫টায় আটরা পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকে ২ কেজি ৫শ’ গ্রাম গাঁজাসহ সাথী বেগম (২৩) নামের এক মাদক বিক্রেতাকে আটক করেছে পুলিশ। সে নগরীর ৪নং ঘাটস্থ রেলওয়ে কলোনীর ভাড়াটিয়া আজিজ সরদারের কন্যা। ঐদিনই নগরীতে ১৩ পুরিয়া হেরোইনসহ পারভীন (৪০) নামের এক মহিলাকে গ্রেফতার করেছে সদর থানা পুলিশ। সে শের-এ-বাংলা রোডস্থ শিশু পল্ল¬ীর ১নং গলির বাসিন্দা হারুন সাহেবের ভাড়াটিয়া মাসুদের স্ত্রী।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র এডিসি শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স লেভেলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইয়াবাসেবির সংখ্যা বেশি। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে-মেয়েরাই ইয়াবার প্রতি বেশি আসক্ত। তবে এখন কেএমপি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরো বেশি তৎপর। প্রতিদিনই মাদকসহ বিক্রেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এটা প্রমাণ করে পুলিশ সোচ্চার রয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ধীরাজ মোহন বিশ্বাস দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে জানান, নগরীতে মাদক নীল ছোবল দিয়েছে। ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে মাদকের। সবচেয়ে বেশি আসক্ত ফেনসিডিলে, তারপর হেরোইন ও গাঁজা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিচালনাধীন মাদকাসাক্ত নিরাময় কেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক নেই। তাদের কোনো কার্যক্রমও পরিলক্ষিত হয় না। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য ১৫টি বেড থাকার কথা থাকলেও এমন কোনো অবস্থা দেখা যায় না।
Comments
Post a Comment