ড্যান্ডিই কেড়ে নিলো আরমানের পা
জয়নাল ফরাজী:

খুলনা নগরীর এক পথশিশু আরমান। সংসার বলতে সে ও তার মা নাজমা বেগম। ছোট বেলা থেকে সংসারের অভাব-অনটনে পথশিশুদের সাথে তার বেড়ে ওঠা। কাজ করেছে প্রদীপন নামের এক এনজিও’র ময়লার গাড়ীর ড্রাইভার হিসেবে। পথশিশুদের সাথে সখ্যতার কারণে ছোট বেলা থেকে আসক্ত মাদকে। বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট, সলিশন আঠা বা ড্যান্ডি, সিরিঞ্জের মাধ্যমে প্যাথিডিন ইত্যাদি গ্রহণ করেছে সে। ঘটনাটি ৩-৪ বছর আগের। একবার তার মায়ের সাথে ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়ে ড্যান্ডি গ্রহণ করে ট্রেনে করে চুয়াডাঙ্গা যাওয়ার পথে নেশাগ্রস্ত হয়ে ট্রেনের চাকার পাশে অচেতন হয়ে থাকে। হঠাৎ সে সেখান থেকে পড়ে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে তার বাম পায়ের হাটু পর্যন্ত। পড়ে জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে একটি ক্লিনিকে আবিস্কার করে। 
এ বিষয় নিয়ে গতকাল কথা হয় ২৪ বছর বয়সী আরমানের সাথে। সে আরও জানায়, খারাপ বন্ধুদের (পথশিশু) খপ্পড়ে পড়ে সে মাদকে জড়িয়ে পড়ে। তার বন্ধুরা প্রায় সবাই মাদকসেবী ও বিক্রেতা। মাদকে আসক্ত হওয়ার পর অর্থ যোগানের জন্য টোকাইয়ের কাজ করতো। 
সে আরও জানায়, ড্যান্ডি এক ধরনের আঠা। যার মূল্য বর্তমান সময়ে মাত্র ৩০ টাকা। এটি গ্রহণ করার পর মানুষের কোন হুশ থাকেনা। সবকিছু দেখতে পারলেও কোন ব্যথা অনুভব করা যায় না। অধিকাংশ পথ শিশু ড্যান্ডিতে আসক্ত হয় কম দামের কারণে। 
তবে এসব কিছুর পরে আরমান এখন একজন স্বাভাবিক মানুষ। তার মতে, মাদক থেকে যুব সমাজ ও পথশিশুদের রক্ষা করা উচিত। যেভাবে পথশিশুরা মাদকে আক্রান্ত হচ্ছে তাতে আগামী শতভাগ পথশিশুই মাদকে আসক্ত হবে সহজলভ্যতার কারণে। 
নিজের পা হারিয়ে সে কেমন আছে জানতে চাইলে সে জানায়, পঙ্গু হওয়ার পর সে ঠিকমত কোন কাজ করতে পারে না। বর্তমানে দুর্বিষয় ভোগান্তিতে দিন অতিবাহিত করছে। পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী তার মা নাজমা বেগমের উপার্জিত অর্থেই তাদের সংসার চলছে। 
নিজের ভুল বুঝতে পেরে সে পথশিশুদের মাদক থেকে ফিরে আসার অনুরোধ জানায় এবং উক্ত সংবাদে তার সঠিক নাম প্রকাশ করতে বলে। যাতে তার পরিণতি বুঝতে পেরে অনেকেই এ পথ থেকে ফিরে আসতে পারে। 

Comments