এক মামলাতেই আটকে আছে খুলনা টেক্সটাইল মিল্স/জয়নাল ফরাজী

খুলনা টেক্সটাইল মিল্স

  1. এক মামলাতেই আটকে আছে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার
জয়নাল ফরাজী ঃ
একের পর এক বাধা বিপত্তির কারণে এখনো আলোর মুখ দেখেনি খুলনা টেক্সটাইল পল্লী প্রকল্প। সরকারের আন্তরিকতা সত্ত্বেও একটি মামলাতেই আটকে আছে শিল্পনগরী খুলনার ১২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী এ প্রকল্পটি। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও নতুন কোন অগ্রগতি না হওয়ায় বর্তমান সরকারের আমলে খুলনা টেক্সটাইল মিলস’র ভাগ্য নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এদিকে ঝুলে আছে এই জমিতে হাইটেক পার্ক নির্মাণের বিষয়টিও।
প্রসঙ্গত, উনিশ শতাব্দীর প্রারম্ভে  খুলনা শহরের নিউ মার্কেটে স্যার আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় নির্মিত এপিসি কটন মিল যা পরবর্তীতে খুলনা টেক্সটাইল মিল নামে পরিবর্তিত। ১৯৯৩ সালে চারদলীয় জোট সরকার কর্র্তৃক মিলটির পুরাতন যন্ত্রাংশ, দুর্বল অবকাঠামো ইত্যাদি নানা সমস্যার কারণ দেখিয়ে কয়েক হাজার লোককে বেকার বানিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রায় ৬ বছর পর মিলের জমির সর্বোত্তম ব্যবহার, শিল্পায়ন ও ১২ হাজার বেকার শ্রমিকের কথা মাথায় রেখে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিলের জমির উপর “খুলনা টেক্সটাইল পল্লী” স্থাপনের প্রকল্প অনুমোদন করেন।
সরকার পরিবর্তনের কারনে প্রায় ৬ বছর প্রকল্পের কাজ থমকে ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মহাজোট সরকারের আন্তরিকতায় প্রকল্পের কাজ শুরু হলে স্বাধীনতা পূর্ব ঋণ আদায়ের ল্েয রূপালী ব্যাংক কর্তৃপ মামলা দায়ের করে। তাদের সাথে মামলা নিষ্পত্তির পর পুনরায় কাজ শুরু হলে ২০১০ সালে জনৈক মাহমুদ আলী মৃধা মালিকানা দাবিতে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৯৮৮০/২০১০। আদালত ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারী মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকারকে মিলের সম্পত্তি হস্তান্তর থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন। যে কারণে প্রকল্পের কাজ বন্ধ বা স্থগিত রাখা হয়। একের পর এক রীটের শুনানী না হওয়ায় সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। আর এই একটি মামলাতেই আটকে আছে খুলনা টেক্সটাইল মিলের জমির সর্বোত্তম ব্যবহার। এদিকে এ প্রকল্পের অনিশ্চয়তার মধ্যেও  টেক্সটাইল মিলের সর্বোত্তম ব্যবহারের লে ২০১৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় আইসিটি সেমিনারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, খুলনা টেক্সটাইল মিলের জমিতে হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হবে। জমি হস্তান্তর হলেই এর কাজ শুরু হবে। কিন্তু গত ৭ মাসে এর অগ্রগতি খুলনাবাসীর চোখে পড়েনি।
এর ফলে নতুন করে দেখা দিয়েছে জটিলতা। দীর্ঘ ২০ বছর অতিবাহিত হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, মামলা, নয়া প্রকল্প ইত্যাদি অজুহাতে আজও ঝুলে আছে খুলনা টেক্সটাইল মিলের জমির সর্বোত্তম ব্যবহার। 
স্থানীয়রা জানান, খুলনা টেক্সটাইল মিলের সীমানা প্রাচীরের নির্মাণ আংশিক সম্পন্ন হলেও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। নির্মাণকৃত সীমানা প্রাচীর অনেকাংশ ভেঙ্গে পড়েছে। এর ফলে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা। সন্ধ্যার পর থেকে সেখানে বসে মদ, গাঁজা, জুয়ার আসর। মাদক সেবনকে কেন্দ্র করেই খুন হয় সোহেল রানা নামের এক তরুণ যুবক। আর চলতি বছর সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন বিএনপি’র এক কর্মী।
খুলনা টেক্সটাইল মিলের জমির সর্বোত্তম ব্যবহার বিষয়ে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ মোশাররফ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, বন্ধ হওয়ার ২০ বছরেও অবহেলিত খুলনাঞ্চলের লাভজনক প্রতিষ্ঠান টেক্সটাইল মিলের ভাগ্য এখনো অনিশ্চয়তায়। একের পর এক খোঁড়া অজুহাতে মিলটির ভাগ্য ঝুলে আছে। জমিতে যাই করা হোক না কেন খুলনাবাসীর প্রত্যাশা দ্রুতগতির সাথে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার করা উচিত।

Comments