খুলনাঞ্চলে এইডস আক্রান্ত ১৩৭ জন/জয়নাল

খুলনাঞ্চলে এইডস আক্রান্ত ১৩৭ জন
জয়নাল ফরাজী:
বিশ্বে প্রতিবছর ২৭ লাখ লোক নতুন করে এইচআইভি পজেটিভে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি বছর মারা যাচ্ছে ৩০ লাখ লোক। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৭৪০০জন আক্রান্ত ও ৮২০০জন রোগী মারা যাচ্ছেন। মহামারি এ ভাইরাসে বাংলাদেশে আক্রান্ত ১২৯৯জন রোগী। এর মধ্যে শুধুমাত্র বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে ১৩৭ জন রোগী এই ভাইরাস বহন করছেন। নগরীর সিএসএস আভা সেন্টারে সিএসএস ও খুলনা প্রেস কাবের যৌথ উদ্যোগে স্টেক হোল্ডার কনফারেন্সে এ তথ্য উঠে আসে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সিএসএস এর  নির্বাহী পরিচালক মি. মার্ক মুন্সীর সভাপতিত্বে উক্ত কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোঃ হাবিবুর রহমান, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ ইয়াছিন আলী সরদার ও খুলনা প্রেস কাবের সভাপতি ফারুক আহমেদ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএসএস এর পরিচালক এডমিন এন্ড অডিট মি. বিধান চন্দ্র দাস ও খুলনা প্রেস কাবের সাধারণ সম্পাদক মি. এস এম জাহিদ হোসেন। এইচআইভি/এইডস কার্যক্রমের উপর মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন করেন সিএসএস এইচআইভি/এইডস প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম এ বাতেন।
খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চল ঝুঁকির কারণ ব্যাখ্যা করা হয় এবং এখনই এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ করার উপযুক্ত সময় তা তুলে ধরা হয়। এইচআইভি/এইডস প্রকল্পের সুবিধাভোগী পরিবহন শ্রমিক, ভাসমান ও বাণিজ্যিক যৌনকর্মী ও পূণর্বাসিত নারীদের আচরণগত পরিবর্তনের কথা তুলে ধরেন।
এসময় এইচআইভি রোগী আফলিন বলেন, তার স্বামী এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তার তিন ছেলে-মেয়ে এই রোগে আক্রান্ত নয়। বর্তমানে তিনি মুক্ত আকাশ বাংলাদেশের সহায়তায় বিভিন্ন ওষুধ নিচ্ছেন। সমাজে কেউ তাকে মেনে নিচ্ছে না। তাকে কর্মেেত্র অবহেলা করা হয়। তিনি সিএসএস এর সহযোগীতায় তিনি বর্তমানে বেঁচে আছেন। তিনি আরও বলেন, তাদের মুক্ত আকাশ সেন্টারে ২০জন শিশু রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেরই পিতা-মাতা নেই। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য তিনি সমাজের বিত্তশীলদের অনুরোধ জানান।
ফুলতলার একজন যৌনকর্মী মুক্তা আক্তার বলেন, ৪র্থ শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় এক মহিলা তাকে ফুলতলা পতিতা পল্লীতে বিক্রি করে দেয়। তখন ৫মাস পর তিনি যৌন পেশায় আসতে বাধ্য হন। এরপর সিএসএস’র নির্বাহী পরিচালক মার্ক মুন্সী’র হস্তেেপ তিনি এ পথ ছেড়ে দিয়ে স্বামী সংসার নিয়ে সুখে আছেন। সিএসএস তাকে জমিসহকারে ঘড় করে দিয়েছে। তিনি এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানান।
ভাসমান যৌনকর্মী শারমিন সুলতানা বলেন, তিনি ৬/৭ বছর ধরে এ পেশায় যুক্ত। সরকারের সহযোগীতা পেলে তিনি এ পথ থেকে ফিরে আসবেন বলে জানান।
এ সময় আরো কথা তুলে ধরেন বাগেরহাটের পূনর্বাসন কেন্দ্রের রওশন আরা, পরিবহন শ্রমিক আবুল কালাম, পূনর্বাসিত যৌনকর্মী মুন্নি বেগম, ফাতেমা বেগম, মুক্ত আকাশের কর্মী রেহেনা বেগম, ড্রপ ইন সেন্টারের সদস্য আব্দুর রশিদ, রূপসা ডিআইসি’র সভাপতি মফিজুর রহমান প্রমূখ।
সিএসএস এর নির্বাহী পরিচালক মি. মার্ক মুন্সী ৪০০টি কম্বল দরিদ্র শীতার্ত মানুষের মাঝে প্রদান করেন এবং প্রতীক হিসেবে সংসদ সদস্যের হাতে ১টি কম্বল তুলে দেন। সর্বশেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি সবাইকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করার জন্য এবং সকলের সহযোগিতা কামনা করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

Comments