খুলনায় সকল অপরাধের শীর্ষে মাদক! জয়নাল ফরাজী

খুলনায় সকল অপরাধের শীর্ষে মাদক!
জয়নাল ফরাজী:

খুলনা জেলায় অপরাধের শীর্ষে এখন মাদক সন্ত্রাস! প্রতিমাসে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতী, অপহরণ, নারী নির্যাতন ইত্যাদি সব মিলে যতগুলি অপরাধ ঘটে তার চেয়ে বেশী সংখ্যক অপরাধ ঘটছে শুধু মাদককে কেন্দ্র করে। এর অন্যতম কারণ মাদকের ব্যবসায় কোটি কোটি টাকার নগদ আমদানী। ফলে একমাত্র আগে থেকেই যে অপরাধকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব সেই মাদক সংক্রান্ত অপরাধই এখন হয়ে উঠেছে নিয়ন্ত্রনহীন। এ তথ্য জানা গেছে খোদ জেলার আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে।
রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্যমতে, গত ২৫ আগষ্ট অনুষ্ঠিত খুলনা জেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয় খুলনা মহানগরীর আটটি থানায় গত জুলাই-১৫ মাসে ১২১টি মামলা দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত মামলা ৪২টি। জেলার নয়টি থানায় গত জুলাই-১৫ মাসে ১৪৮টি মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে মাদকদ্রব্য ১৭টি।
উলে¬খ্য, একমাত্র মাদক ব্যবসা ও এর ব্যবহার প্রতিরোধে কাজ করছে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল, অর্থাৎ জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশ, আনসার, গোয়েন্দা পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনী। আর এদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সকল অপরাধের শীর্ষে এখন মাদক। 
খুলনার নয়টি উপজেলা থেকে সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার গ্রামে গ্রামে এখন ফেন্সিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের জমজমাট ব্যবসা চলছে। আর এ ব্যবসাকে প্রত্যক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের এক শ্রেনীর তথাকথিত নেতা ও প্রশাসনের বিপথগামী কিছু সদস্য, যাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে মাদকের সিন্ডিকেট।
জানা গেছে, পরিবারের অল্প বয়স্ক সদস্যরা মাদক সেবন করে বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে। তাদের দাবি, প্রশাসনের একশ্রেনীর বিপথগামী সদস্যদের মদদের ফলে উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না মাদক ব্যবসায়ীদের বরং প্রতিনিয়ত তারা আরও শক্তিশালী হচ্ছে। তাদের দাবি এখনই মাদকের বিস্তার রোধ করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে গোটা সমাজই মাদকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে এবং প্রতিনিয়ত জন্ম হতে থাকবে নতুন নতুন অপরাধীদের।
মাদকের সর্বগ্রসী বিস্তার এবং তা রোধের উপায়ে দায়িত্বশীলদের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে, খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পারভীন আখতার দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে বলেন, তাদের প্রচেষ্টার ঘাটতি নেই। তিনি বলেন, তাদের লোকবল প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম, এবং লজিস্টিক সাপোর্ট নেই বললেই চলে। তারপরও দপ্তরের লোকেরা কর্মে আন্তরিক। তবে এটি এখন একটি জাতীয় সমস্যা, তাই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া ভালো কিছু ফল লাভ সম্ভব নয়।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের একাধিক অফিসার বলেন, সর্ষের মধ্যেই ভূত আছে, তাই সবার আগে সর্ষের ভূত তাড়াতে হবে, অন্যথায় সর্ষের ভূত এক সময় দানব হয়ে উঠবে, যার লক্ষণ ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে!

Comments